ট্রাফিক পুলিশ মামলা দিলে আপনার করনীয় কি তা জনাতেই আজকের এই পোস্ট। আপনার গাড়ি বা মোটরসাইকেলের কাগজপত্র ঠিক আছে কিনা তা চেক করতে বা আপনি কোন ট্রাফিক আইন লঙ্ঘন করলে পুলিশ আপনার গাড়ি থামিয়ে মামলা দিতে পারে। একজন ট্রাফিক পুলিশ বা দায়িত্বরত কোনো পুলিশ কর্মকর্তা চাইলে আইনের আওতায় থেকে রাস্তায় আপনার কোন অনিয়মের জন্য বা কোনো ট্র্যাফিক আইন ভঙ্গ করার জন্য আপনার গাড়ি বা মোটর সাইকেল আটক করতে পারে। আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা ট্রাফিক পুলিশ গাড়ি বা মোটর সাইকেল আটকালে বা রাস্তায় গাড়ী বা মোটর সাইকেল থামালে বিরক্ত বোধ করি মাঝে মাঝে ট্র্যাফিক পুলিশের সাথে খারাপ আচরণও করি।এরকম কিছু করা একদমই অনুচিত, পুলিশ কর্মকর্তা বা ট্র্যাফিক পুলিশ গাড়ি বা মোটর সাইকেল এবং গাড়ি বা মোটর সাইকেল ড্রাইভারের সকল কাগজপত্র ঠিক আছে কিনা তা প্রয়োজনবোধে চেক করার ক্ষমতা রাখেন। অনেকে আবার ট্রাফিক বা পুলিশ কর্মকর্তা গাড়ি বা মোটর সাইকেল আটক করলে বা পুলিশ চেকিং এর জন্য থামালে ভয় পেয়ে যান। ভয় পাওয়া বা ঘাবড়ে যাওয়ার মত এখানে তেমন কিছুই নেই।
ট্রাফিক পুলিশ যেসব কাগজপত্র দেখতে চায় সেসব কাগজপত্র তাদের দেখানো উচিত কারন তারা তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব থেকেই এগুলা চেক করে থাকেন। আর আমাদের উচিত তাদের সাথে ভাল ব্যবহার করা এবং তাদেরকে তাদের কাজ করে যাওয়ার ব্যাপারে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা। আপনার গাড়ির বা মোটর সাইকেলের কাগজপত্রে কোন ভুলত্রুটি থাকলে বা ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করলে ট্র্যাফিক পুলিশ বা দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তা আপনার গাড়ির বা মোটর সাইকেলের কাগজপত্র জব্দ করে নিজের কাছে রেখে দিবেন এবং আপনাকে একটি মামলার প্রাপ্তি-স্বীকারসূচক পত্র বুঝিয়ে দিবেন। মামলার রসিদ/ প্রাপ্তি-স্বীকারসূচক পত্র ভালভাবে পড়ে মামলা সম্পর্কিত সবকিছু ভালোভাবে বুঝে নিতে হবে। যেমনঃ কি কি কারনে মামলা দেয়া হলো, কত টাকার মামলা দেয়া হলো, যে অফিসার মামলা দিলো তার নাম, কোথায় জরিমানা প্রদান করতে হবে ইত্যাদি। উল্লেখিত সবকিছু জরিমানা বা মামলার রসিদে উল্লেখ করা আছে কিনা তা ভালভাবে দেখে নিতে হবে। মুলত মামলা প্রদানের সময় জরিমানার যে রশিদ/ প্রাপ্তি-স্বীকারসূচক পত্র দেয়া হয়, সেই রশিদের বা প্রাপ্তি-স্বীকারসূচক পত্রের মধ্যেই লিখা থাকে কবে এবং কোথায় গিয়ে ধার্য কৃত জরিমানা প্রদান করে জব্দ করা কাগজ পত্র ছাড়িয়ে আনতে হবে।
রশিদে বা প্রাপ্তি-স্বীকারসূচক পত্রে উল্লেখিত তারিখ সময় এবং অফিসের সংশ্লিষ্ট জোনের ডেপুটি পুলিশ কমিশনার চাইলে ধার্য-কৃত জরিমানা পরিশোধের বিনিময়ে মামলা্টি নিষ্পত্তি করতে পারেন। আবার ডেপুটি পুলিশ কমিশনার চাইলে ধার্য-কৃত জরিমানা মউকুফও করে দিতে পারেন যদি অপরাধ অতো গুরতর না হয় তাহলে। জরিমানা প্রদানের জন্য রশিদের বা প্রাপ্তি-স্বীকারসূচক পত্রের উল্লেখিত সংশ্লিষ্ট জোনাল অফিসে গিয়ে জরিমানা প্রদান করে, আপনি পুলিশ অফিসার কর্তৃক জব্দকৃত কাগজপত্রাদি ফেরত নিয়ে আসতে পারবেন। তবে উল্লেখ্য যে ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় যদি কোনো মামলা দেয়া হয় তাহলে অনলাইন বা ডিজিটাল পেমেন্টের মাধ্যমে আপনি আপনার জরিমানার জন্য প্রদেয় টাকা প্রদান করতে পারবেন। যদি মামলার রশিদে বা প্রাপ্তি-স্বীকারসূচক পত্রে উল্লেখিত সময়ের মধ্যে সংশ্লিষ্ট জোনাল অফিসে উপস্থিত থাকতে না পারেন বা জরিমানা দিতে না পারেন, তাহলে মামলার বিস্তারিত সহ প্রতিবেদন আকারে মামলাটি আদালতে প্রেরণ করা হতে পারে। তাহলে মামলার বিপরীতে আদালত ওয়ারেন্ট ইস্যু করতে পারে। আদালতের একটি শাখা রয়েছে, যে শাখায় মোটরযান সংক্রান্ত মামলার সমস্ত কাজ নিষ্পন্ন করা হয়ে থাকে।
আপনি যদি যথা সময়ে আপানর উপর ধার্যকৃত জরিমানা প্রদানে অপরাগ হন এবং আপনার মামলাটি আদালতে প্রেরণ করা হয়, তাহলে আপনাকে আদালতে সশরীরে উপস্থিত হয়ে জারিমানা প্রদান করা সাপেক্ষে মামলা থেকে অব্যাহতি নিতে হবে।আইন ভঙ্গের ধরন বা অপরাধের ধরনের উপর ভিত্তি করে ট্রাফিক পুলিশ আপনার গাড়ি বা মোটর সাইকেলটি আটক করে রেখে দিতে পারেন। সেক্ষেত্রে গাড়ি বা মোটর সাইকেলটি আবারো নিজের জিম্মায় নেয়ার জন্য কিছু সুনির্দিষ্ট নিয়ম কানুন রয়েছে যা পালন করা আবশ্যক। প্রথমেই সংশ্লিষ্ট থানা থেকে মামলার এজাহারের কপি তুলে নিতে হবেএবং এর সাথে গাড়ি বা মোটর সাইকেলের রেজিস্ট্রেশনের ফটোকপি নিয়ে একজন বিজ্ঞ আইনজীবীর সাথে পরামর্শ করতে হবে।
বিজ্ঞ আইনজীবী বিচারক ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে গিয়ে মামলার নথি পর্যবেক্ষণ করে প্রথম শুনানি করবেন। প্রথম দিনের শুনানি শেষ হলে, আদালত মামলার ইনভেস্টিগেটর অফিসার এবং বিআরটিএকে বা সংশ্লিষ্ট কতৃ্ররপক্ষকে গাড়ি বা মোটর সাইকেলের মালিকানা নিরূপণের জন্য আদেশ প্রদান করবেন। পাশাপাশি অন্য কোন অপরাধের সংশ্লিষ্টতা আছে কিনা তাও যাচাই করে দেখতে আদেশ প্রদান করবেন। যেহেতু গাড়ি বা মোটর সাইকেল থানায় আটক করে রাখা হয়ে থাকে। তাই আদালতের প্রদত্ত আদেশ থানায় পাঠিয়ে দিবেন, তারপর থানায় গিয়ে যোগাযোগ করতে হবে, যাতে করে তদন্তকারী কর্মকর্তা দ্রুত তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে প্রেরণ করে দেন। থানা থেকে প্রতিবেদন আবার আদালতে প্রেরণ করা হলে বিজ্ঞও আইনজীবী তা পুনরায় পর্যবেক্ষণ করে দেখবেন। এরপর বিজ্ঞ আইনজীবী একটি সাক্ষরের মাধ্যমে গাড়ির মালিকানা নিরূপণের ব্যাপারে নিশ্চয়তা প্রদান করবেন। এই শুনানির দিন গাড়ির মালিককে অবশ্যই আদালতে সশরীরে উপস্থিত থাকতে হবে।
আদালত যদি বিআরটিএ, তদন্তকারী কর্মকর্তার প্রতিবেদন এবং বিজ্ঞ আইনজীবীর শুনানিতে সন্তুষ্ট হয় তাহলে আবার থানা কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করবেন এবং গাড়ি বা মোটর সাইকেলটি তাহার মালিকের জিম্মায় দেয়ার নির্দেশ প্রদান করবেন। এরপর গাড়ী বা মোটর সাইকেলের মালিক তদন্তকারী কর্মকর্তার সাথে আবার যোগাযোগ করে গাড়িটি নিজের জিম্মায় নিয়ে নিবেন। তবে অত্যাবশ্যক শর্ত থাকে যে, তদন্তকারী কর্মকর্তা পরবর্তীতে তদন্তের জন্য গাড়ি বা মোটর সাইকেলটি চাইলে আবার থানায় হাজির করতে পারবেন। এভাবে আটক করা গাড়ি বা মোটর সাইকেল নিজের জিম্মায় নিতে অন্তত ১ মাসের মতো সময় লাগতে পারে।
আমাদের সবসময় ট্রাফিক আইন মেনে চলা উচিত। গাড়ি বা মোটর সাইকেলে চলাচল করার সময় প্রয়োজনীয় কাগজপত্র গুলো নিজের সঙ্গে রাখুন। তাহলে দেখা যাবে অনেক ধরণের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা, ঝামেলা , দুর্ঘটনা এবং দুর্ভোগ থেকে রেহাই পেতে পারেন।