শ্রম আইন অনুযায়ী শ্রমিক কারা এবং কর্মী কারা। চলুন জেনে নেই শ্রমিকের সঙ্গা জেনে নেই।
শ্রম আইন ২০০৬ (সংশোধীত ২০১৮ সহ) ধারা ২ এর উপধারা ৬৫ তে বলা হয়েছে:
“শ্রমিক” অর্থ শিক্ষাধীনসহ কোন ব্যক্তি, তাহার চাকুরীর শর্তাবলীতে প্রকাশ্য বা উহ্য যে ভাবেই থাকুক না কেন, যিনি কোন প্রতিষ্ঠানে বা শিল্পে সরাসরিভাবে অথবা কোন ঠিকাদার এর মাধ্যমে মজুরী বা অর্থের বিনিময়ে কোন দক্ষ, অদক্ষ, কায়িক, কারিগরী, ব্যবসা উন্নয়নমূলক অথবা কেরানীগিরির কাজ করার জন্য নিযুক্ত হন তিনিই ”শ্রমিক” হিসিবে বিবেচিত হবেন।
কিন্তু প্রধানতঃ তদারকি কর্মকর্তা এবং প্রশাসনিক বা ব্যবস্থাপনামূলক কাজে দায়িত্বপ্রাপ্ত কোন ব্যক্তি শ্রমিক বলে বিবেচিত হবেন না।
শ্রম আইন এর উপরোক্ত সঙ্গা তে প্রতিষ্ঠান বলতে কাদের বোঝানো হয়েছে চলুন জেনে নেই।
শ্রম আইন ২০০৬ (সংশোধীত ২০১৮ সহ) ধারা ২ এর উপধারা ৩১ এ বলা হয়েছে:
প্রতিষ্ঠান” অর্থ কোন দোকান, বানিজ্য প্রতিষ্ঠান, পরিবহন, শিল্প প্রতিষ্ঠান অথবা বাড়ি-ঘড় বা আঙ্গিনা যেখানে কোন শিল্প পরিচালনার জন্য শ্রমিক নিয়োগ করা হয়।
তাহলে শ্রমিক আসলে কারা?
শ্রমিক হলো এমন ব্যাক্তি যিনি কোন উৎপাদন/পক্রিয়াজাতকরন/পরিবহন কাজের সাথে সরাসরি জড়িত।
তদারকি কর্মকর্তা কারা ?
শ্রম বিধিমালা ২০১৫ এর ২ ধারার ১ উপধারার ”ছ” তে বলা হয়েছে:
মালিক বা ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের নিকট হইতে লিখিতভাবে ক্ষমতাপ্রাপ্ত এমন কোন ব্যাক্তি যিনি কারখানা বা প্রতিষ্ঠানের কোন শাখার কোন কাজের বা সেবার লক্ষমাত্রা নির্ধারন, কাজের পরিধি নিয়ন্ত্রন, বাস্তবায়ন কার্যক্রম নিয়ন্ত্রন, কাজের মূল্যায়ন বা পর্যালোচনা, শ্রমিকদের দিক নির্দেশনা বা তদারকি করেন এমন ব্যাক্তি।
প্রশাসনিক বা ব্যবস্থাপনামূলক কাজে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যাক্তি কারা ?
শ্রম বিধিমালা ২০১৫ এর ২ ধারার ১ উপধারার ”ঞ” তে বলা হয়েছে:
মালিক বা ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের নিকট হইতে লিখিতভাবে ক্ষমতাপ্রাপ্ত এমন কোন ব্যাক্তি যিনি কারখানা বা প্রতিষ্ঠানে শ্রমিক বা কর্মচারীদের নিয়োগ, বেতন ও ভাতাদি নির্ধারন, চাকরির অবসান বা চাকরি হইতে অপসারন, চুড়ান্ত পাওনাদি পরিশোধ, প্রতিষ্ঠানের ব্যায় অনুমোদন বা নিয়ন্ত্রন কাজে নিয়োজিত এমন ব্যাক্তি।
তদারকি/প্রশাসনিক বা ব্যবস্থাপনামূলক কাজে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যাক্তি বলতে মালিক পক্ষ বা তার পক্ষে নিযুক্ত ব্যাক্তি:
যদি আমরা শ্রম আইন কে দেখি:
৪৯) কোন প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে, “মালিক” অর্থ এমন কোন ব্যক্তি যিনি প্রতিষ্ঠানে শ্রমিক নিয়োগ করেন, এবং নিম্নলিখিত ব্যক্তিগণও ইহার অর্ন্তভুক্ত হইবেন, যথাঃ-
(ক) উক্ত ব্যক্তির কোন উত্তরাধিকারী, অভিভাবক, হস্তান্তরমূলে উত্তরাধিকারী বা আইনগত প্রতিনিধি,
(খ) উক্ত প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক বা উহার ব্যবস্থাপনা বা নিয়ন্ত্রণের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত কোন ব্যক্তি,
(ঙ) অন্য কোন প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে, উহার মালিক এবং উহার প্রত্যেক পরিচালক, ব্যবস্থাপক, সচিব, প্রতিনিধি অথবা উহার কাজ-কর্মের ব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত কোন কর্মকর্তা বা ব্যক্তি,
(চ) মালিক ব্যতীত অন্য কোন ব্যক্তির দখলে আছে এরূপ কোন প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে, উক্ত প্রতিষ্ঠান দখলকারী ব্যক্তি অথবা উহার নিয়ন্ত্রণকারী চূড়ান্ত ব্যক্তি অথবা ব্যবস্থাপক অথবা উক্ত কাজ-কর্মের ব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত কোন উপযুক্ত কর্মকর্তা
তাহলে উপরের সংগা থেকে বোঝা যায় যে তদারকি বা ব্যবস্থাপনা কাজে নিয়োজিতরা মূলত মালিক পক্ষের নিয়োজিত কর্মচারী।
কর্মী কারা?
তদারকি কমকর্তা বা প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনামূলক কর্মকর্তাকে চুড়ান্ত কোন ক্ষমতা প্রদান করেনা। অর্থাৎ এই দুই ধরনের ব্যাক্তি যে কাজটিই করূক না কেন তা মালিক পক্ষের চুড়ান্ত অনুমোদন ছাড়া বা অনুমতি ছাড়া তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়না। এরা মুলত একটি চাকুরির চুক্তিপত্রের মাধ্যমে নিয়োগ পেয়ে থাকে। এবং উক্ত কাজগুলো সম্পন্ন করে থাকে। তাই এরা শ্রমিকের মতো শ্রম আইন অনুযায়ী অধিকার পায়না। এবং এদের জন্য বর্তমানে বাংলাদেশে আলাদা কোন আইন নেই।
বাংলাদেশের বাস্তবতা
অর্থাৎ বেসরকারী অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান/কোম্পানী/শিল্প কারখানা এই দুই শ্রেনীর ব্যাক্তিদেরকে শ্রমিকের মতোই ব্যবহার করছে। এবং নিজেদের মালিকানার ক্ষমতা কাউকে হস্তান্তর বা চুড়ান্ত কোন ক্ষমতা একচ্ছত্র ভাবে প্রদান করেনা। যদিও নৈতিক দিক থেকে শ্রমিকরা যেসব অধিকার পায় কর্মীরা সেগুলো পাবে এবং সেই সাথে চুক্তি অনুযায়ী বেতন ও পাবে। কিন্তু বাংলাদেশে কোন কর্মী নিয়োগ দেয়ার ক্ষেত্রে কোম্পানী চাকুরীতে যোগদানের সময় চাকুরীর চুক্তিপত্রে যা থাকবে একজন কর্মীকে ততটুকুই দেয়া হয়। অনেক ক্ষেত্রে কোম্পানী চুক্তি অনুযায়ীও সুযোগ সুবিধা প্রদান করেনা।
শেষ কথা
তাই, যদি আমাদের দেশে একটি শ্রম আইন আছে তবে এই শ্রম আইন শুধুমাত্র আমাদের দেশে উৎপাদন/ বাজারযাতকরন/ পরিবহন ইত্যাদি শিল্প ও কলকারাখানার কাজের সাথে সরসারি জড়িত নিন্ম আয়ের মানুষদের জন্যই প্রযোজ্য।
আর আপনি যদি উপরের মত কোন কাজ না করে থাকেন বা আপনি যদি মধ্যম আয়ের অথবা উচ্চ পদে উচ্চ বেতনে কোন অফিসিয়াল কাজে মাসিক বেতনের বিনিময়ে ম্যানেজার/ অফিস সহকারী/ অফিসার/ এক্সিকিউটিভ/ জিএম ইত্যাদি পদে নির্দিস্ট বেতনে চুক্তির বিনিময়ে কাজ করে থাকেন তাহলে আপনি কর্মী। আর এই ক্ষেত্রে যদিও নৈতিক দিক থেকে প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানের শ্রম আইনের নুন্যতম সুযোগ সুবিধা পাওয়া উচিত কিন্তু আপনি একজন কর্মী হিসাবে তা পাবেন না। আপনি জয়েন করার সময় আপনার চুক্তিপত্রে যা লেখা থাকবে তাই পাবেন।
তাই আপনাদের জন্য পরামর্শ:
আপনি যদি শ্রমিক হিসাবে কোর্থাও কাজ না করে থাকেন তাহলে সবসময় আপনি যে কোন চোকরিতে যোগদান করার আগে শুরূতেই ওই কোম্পানী আপনাকে কি সুযোগ সুবিধা দিচ্ছে তা দেখে তারপর জয়েন করবেন। যদি চুক্তিতে যা আছে তাও আপনাকে দেয়া না হয় তাহলে এই চুক্তিপত্র অনুযায়ী মামলা করতে পারবেন।