প্রিয় পাঠক, জমি কেনার আগে অবশ্যই যে কাজগুলো করবেন এর ১ম পর্বে আমরা বেশকিছু গুরুত্বপূর্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। ২য় পর্বে আমরা জানবো জমির কাগজপত্র আইনজীবী কর্তৃক পর্যালোচনা করার পর আপনার করনীয় কি হবে সেই সম্পর্কে।
আইনজীবী কতৃর্ক কাগজপত্র ভেটিং হলে যদি আপনি আইনজীবীর নিকট থেকে জমি সম্পর্কে ভালো মতামত পান বা সবকিছু ঠিক আছে বলে জানতে পারেন তাহলে আপনি সেই জমি নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে পারেন। তবে আমার এই লেখার উদ্দেশ্য আপনাকে আইনজীবী মূখী করা নয়। বরং আপনাকে স্বয়ং সম্পূর্ন করা তো আসুন জেনে নেই বিক্রেতার কাছ থেকে সকল কাগজপত্রের ফটোকপি নেওয়ার পর আপনার করনীয়।
প্রথমেই দেখুন আপনি যার কাছ থেকে জমিটি কিনছেন দলিলে সেই ব্যাক্তির নাম পিতার নাম আর বাস্তব বিক্রেতা একই ব্যাক্তি কিনা। এই বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার জন্য বিক্রেতার কাছ থেকে তার এনআইডি বা জাতীয় পরিচয়পত্র চেয়ে নিন। এবং বিক্রেতার নিকট থেকে তার ওয়ারিশ সাটির্ফিকেট সংগ্রহ করে নিন। বিক্রেতার পরিবারের সদস্য সংখ্যা ও ভবিষৎ উত্তরাধীকার সম্পর্কে আপনার ধারনা হয়ে যাবে।
যখন আপনি নিশ্চিত যে বিক্রেতা এবং বিক্রেতার দাবীকৃত মুল দলিলের ব্যাক্তি একই তখন আপনাকে দলিলের গভীরে প্রবেশ করতে হবে। অর্থাৎ এবারে দলিল যাচাই বাছাই এর পালা। প্রথমেই চলে যান দলিলের তফসিলে। তফসিল সবসময়ই দলিলের শেষ অংশে থাকে।
তফসিল হলো একটি সম্পত্তির বর্ননা বা বিবরন। অর্থাৎ তফসিলে জমিটি কোন দাগ কোন মৌজা এবং এর চৌহদ্দি কি তার বিবরন থাকে।
এবার আপনি প্রথমেই দেখুন বিক্রেতার মুল দলিলে উল্লেখীত জমির অবস্থান এবং আপনি যেই জমিটি কিনতে চাইছেন তা একই কিনা।
এই বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার জন্য দলিলে উল্লেখিত জেলা, মৌজা, এবং দাগ নং টি লক্ষ্য করূন।
ধরুন, আপনি জমি ক্রয় করতে চাইছেন উত্তরখান মৌজায় তাহলে দলিলেও উত্তরখান মৌজাই থাকতে হবে। এবার আসুন দাগ বা প্লট নম্বর কিভাবে নিশ্চিত হবেন। মনে করূন বিক্রেতার মুল দলিলে দেওয়া আছে সিটি জরিপ প্লট/ দাগ নম্বর ৯৪০১।এবার আপনি কিভাবে বুঝবেন যে আপনি যেই জমিটি কিনতে চাইছেন বা বিক্রেতা আপনাকে যেই জমিটি দেখাচ্ছে তার দাগ নং আসলেই ৯৪০১ কিনা? এটা বুঝতে হলে আপনাকে বেশ কিছু টাকা খরচ করতে হবে সাভের্য়ার এর পেছনে একজন সাভের্য়ার আপনার পছন্দকৃত জমিটি ডিজিটাল পরিমাপ করে আপনাকে একটি ম্যাপ প্রদান করবে। এবং তারপর আপনি সেই ম্যাপ দেখেই নিশ্চিত হতে পারবেন যে আপনার পছন্দকৃত জমিটির প্রকৃত দাগ নম্বর কত। এই ম্যাপকে আমরা প্যান্টাগ্রাফ বলে থাকি। তো চলুন জেনে নেই প্যান্টাগ্রাফ কি?
একটি মৌজার সিএস, এসএ, আরএস, বিএস/সিটি জরিপ ম্যাপকে একত্র করে যে বিশেষ ম্যাপ প্রস্তুত করা হয় তাকেই প্যান্টাগ্রাফ বলে। এই ম্যাপ এ সুবিধা হলো এই ম্যাপে সিএস, এসএ, আরএস, বিএস/সিটি জরিপ প্রত্যেকটি ভিন্ন ভিন্ন রঙ্গের কালিতে একটির উপর আরেকটি প্রতিস্তাপিত হয়। যার ফলে সিএস থেকে শুরূ করে সিটি জরিপ পর্যন্ত কোন কোন দাগ কিভাবে পরিবর্তিত হলো এবং এর সর্বশেষ রূপটি কেমন তা একনজরেই দেখা যায় এই প্যান্টাগ্রাফ দিয়ে।
তো আসা করি এই প্যান্টাগ্রাফ এর মাধ্যমে আপনি নিশ্চিত হলেন যে আপনি আপনার পছন্দের জমিটির কাগজই দেখছেন। এর পর আপনাকে দেখতে হবে দলিলের মালিকানার বৈধতা সম্পর্কে। জমি ক্রয় সিরিজের ৩য় পর্বে আমরা খতিয়ান এর সাথে মিল রেখে কিভাবে মালিকানার বৈধতা মিলাবেন তা আলোচনা করবো।